শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে আরেকটি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার জন্ম নিবে ভাণ্ডারিয়ায় গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, মৃত্যু নিয়ে রহস্য, স্বামী পলাতক বিএনপি সবসময়ই ধর্মীয় সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে -মাহমুদ হোসেন পিরোজপুর শিক্ষককে হাতুড়িপেটা, বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার কাউখালীতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান উপলক্ষে জনসচেতনতা ও প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত ভান্ডারিয়ায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা পিরোজপুরে হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন নেছারাবাদে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লোহার পুল ও প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মঠবাড়িয়ায় ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল গৃহবধূর লাশ, স্বামী ও শ্বশুর আটক পিরোজপুর জেলা বিএনপির আংশিক আহবায়ক কমিটি ঘোষণা কাউখালীতে মন্ডপগুলোতে চলছে দুর্গা পূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান নেছারাবাদে ২৬ জন শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা পিরোজপুরে পিয়ার পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল ভান্ডারিয়ায় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নদীতে জাল ফেলছে জেলেরা! মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ পিরোজপুর ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এর কমিটি গঠন: সোহাগ সভাপতি, মিঠু সম্পাদক কাউখালীতে অপহরণের তিন মাস পর সপ্তম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী উদ্ধার কাউখালীতে জেলের মরদেহ উদ্ধার ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারীকে প্রাণ নাশের হুমকির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ভাণ্ডারিয়া শাহাবুদ্দিন কামিল মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণীর প্রথম ক্লাস উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা
মঙ্গোলীয়দের ‘ভাষা’ কেড়ে নিতে চায় চীন, মান্দারিন চাপানোর চেষ্টা

মঙ্গোলীয়দের ‘ভাষা’ কেড়ে নিতে চায় চীন, মান্দারিন চাপানোর চেষ্টা

চীন তার জাতিগত সংখ্যালঘুদের নির্মূল করতে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে উইঘুর মুসলমানদের ‘মূলধারায়’ অন্তর্ভুক্ত করার চলমান তৎপরতার মধ্যে কমিউনিস্ট শাসিত দেশটি এখন ইনার মঙ্গোলিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সংখ্যালঘু মঙ্গোলীয়দের ভাষা ও সংস্কৃতি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। চলতি বছরের আগস্টে চীন সরকার ইনার মঙ্গোলিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একাডেমিক কারিক্যুলামের ওপর নজরদারি করার ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীনের সঙ্গে সংযুক্ত অঞ্চলটিতে ৪২ লাখ মঙ্গোলীয়ের বসবাস। চীন সরকারের নতুন নিয়মের আওতায় অঞ্চলটিতে মঙ্গোলীয় ভাষায় শিক্ষাদান বন্ধ করে চীনা মান্দারিন ভাষায় সাহিত্য, রাজনীতি ও ইতিহাসের মতো বিষয় শেখানো হবে। তিব্বত ও উইঘুর অধ্যুষিত জিনজিয়াংয়ে একই ধরনের কর্মসূচি চালাচ্ছে চীন সরকার, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি যাকে ‘সাংস্কৃতিক সম্পৃক্তকরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এমন নীতির পক্ষে যুক্তি দিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি মঙ্গোলীয়দের উচ্চশিক্ষা ও চাকরি পেতে সুবিধা দেবে। এ ব্যাপারে চীনের মুখপাত্র হুয়া চুনইন বলেন, প্রচলিত জাতীয় কথ্য ও লিখিত ভাষা জাতির সার্বভৌমত্বের প্রতীক। জাতীয় ভাষা শেখা ও ব্যবহার করা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা চীনের এই দাবিকে চীনা প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিং গৃহীত ‘আগ্রাসী আত্তীকরণ’ নীতির একটি অংশ বলে মনে করছেন। ২০১৪ সালে শি জিনপিং বলেছিলেন, আমাদের কিছু অঞ্চলে দ্বিভাষিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা উচিত— সংখ্যালঘুদের জাতীয় সাধারণ ভাষা শেখা এবং ওই অঞ্চলে বসবাসকারী মূলধারার জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘুদের ভাষা শিখতে উত্সাহিত করার জন্য। চীন সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইনার মঙ্গোলিয়ায় বসবাসকারী মঙ্গোলীয়রা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেননি। ইনার মঙ্গোলিয়ার অধিবাসীরা স্বাধীন মঙ্গোলিয়ার মতো নয়, তারা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী মঙ্গোলীয় বর্ণমালা সংরক্ষণ করতে সফল হয়েছেন। পক্ষান্তরে রাশিয়ার প্রভাবে সিরিলিক বর্ণমালা ব্যবহার করছেন স্বাধীন মঙ্গোলীয়রা। ইনার মঙ্গোলিয়ার অধিবাসীরা নতুন চীনা নীতির বিষয়ে সেই একই ভয় পাচ্ছেন। চীনের নতুন ভাষা নীতির প্রতিবাদে ইনার মঙ্গোলিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী নিয়ে ধর্মঘট করেছেন অভিভাবকরা। চলতি মাসে স্কুল চালু হওয়ার পর মাত্র ৪০ জন মঙ্গোলীয় শিক্ষার্থী পরবর্তী টার্মের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে। প্রথম দিনের ক্লাসে মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। অভিভাবকরা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ভাষা শিক্ষার নতুন নির্দেশনার পরিবর্তে তারা তাদের শিশুদের স্কুলে না পাঠিয়ে বাড়িতেই রাখবেন। ইনার মঙ্গলীয়দের এমন প্রতিবাদ-বিক্ষোভে হতাশ হয়েছে চীনের কমিউনিস্ট শাসিত সরকার। মঙ্গোলিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি সাখিয়াজিন এলবেগদর্জ টুইট করে বলেছেন, চীনে মাতৃভাষা ও ধর্মগ্রন্থ রক্ষায় সচেষ্ট মঙ্গোলীয়দের প্রতি আমাদের সমর্থন জানানো দরকার। মাতৃভাষা শেখা ও তা ব্যবহার করার অধিকার সবার অবিচ্ছেদ্য অধিকার। এই অধিকার সমুন্নত রাখাই চীনের জন্য সম্মানজনক ও দায়িত্বশীল শক্তি হয়ে ওঠার একটি উপায়। ইনার মঙ্গোলিয়ার অভিভাবকদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে প্রদর্শিত একটি ব্যানারে লেখা ছিল, মঙ্গোলীয় হয়ে ওঠার অবিচ্ছেদ্য অংশ মঙ্গোলিয়ার ভাষা। যদি কোন ব্যক্তি তার ভাষা হারিয়ে ফেলে তবে সে তার জাতীয় পরিচয়ও হারিয়ে ফেলে। মান্দারিন ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে একটি ভিডিওতে দক্ষিণ মঙ্গোলিয়ার নাগরিকরা চিৎকার করে বলেন, ‘আমার মঙ্গোলিয়া! চিরকাল আমার মঙ্গোলিয়া!’ অন্য একটি ভিডিওতে অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের মাতৃভাষা মঙ্গলীয়ান! মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা মঙ্গোলীয়ান’। খাদ্য বিতরণ কর্মীরাও মাতৃভাষার লড়াই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। অনেকে তাদের বাইকে ব্যানার বহন করেন, যাতে লেখা ছিল—আমাদের মাতৃভাষাকে বাঁচাও।কোয়ার্টজকে একজন জাতিগত মঙ্গোলীয় বলেন, আমরা আমাদের নিজ দেশেই সবচেয়ে দুর্বল ও নিপীড়িত। কল্পনা করে দেখুন, আপনার নিজের ভাষা শেখা ও পাবলিক ডকুমেন্টে নিজ ভাষায় স্বাক্ষর করার অনুমতি নেই! প্রবাসী মঙ্গোলীয়, মানবাধিকার সংগঠন এবং স্থানীয়রা চীন সরকারের নতুন নীতি বাতিলের দাবিতে পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০টি কাউন্টারে ২০ হাজার লোকের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে এবং ১৯৬টি আবেদন আঞ্চলিক সরকারের শিক্ষা ব্যুরোতে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গোলীয়দের ভাষা শিক্ষায় চীন সরকারের আগ্রাসী নীতির প্রতিবাদে বাচ্চাদের স্কুলে না পাঠানোর জেরে প্রতিবাদকারী বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের কোনরকম শাস্তি দেওয়া হলে রাষ্ট্রায়ত্ত মঙ্গোলিয়ান টিভি ও রেডিও স্টেশনের প্রায় ৩০০ কর্মচারী বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। চীনা সরকার কঠোরভাবে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছে। বিক্ষোভ কর্মসূচি নস্যাৎ করতে স্বায়ত্তশাসিত ওই অঞ্চলে সশস্ত্র সামরিক যানবাহন ও ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে চীন সরকার। গত ৩১ আগস্ট একটি ভিডিও শেয়ার করে ইউটিউবার জেনিফার জেং বলেন, চীন সরকারে ভাষা শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ চলাকালে ৩১ আগস্ট সামরিক সাঁজোয়া যান ইনার মঙ্গোলিয়ার রাস্তায় মোতায়েন করা হয়। অন্যদিকে, পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে এবং সরকারি কর্মচারীদের তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নির্দেশ দেয়; না হলে চাকরি হারাতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। চীনা কমিউনিস্ট সরকার মাতৃভাষার আন্দোলনের নেতাদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দিলে প্রণোদনা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিও করা হয়েছে। হরকিন জেলায় এরকম একটি তালিকায় ১২৯ জন ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গোলীয় বিক্ষোভকারীদের পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ও সংগঠিত হওয়ায় বাধা দিতে চীন সরকার ‘বাইনু’ নামে একটি মঙ্গোলিয়ান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মও বন্ধ করে দিয়েছে। চীন সরকার জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার দখল এবং তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ধ্বংস করতে কোন বদ্ধপরিকর। নব্বইয়ের দশক থেকে ধীরে ধীরে মান্দারিন ভাষাকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দিতে থাকে চীন সরকার। আগে ইনার মঙ্গোলিয়ার স্কুলগুলোতে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ানো হতো মান্দারিন ভাষা, পরে তা দ্বিতীয় শ্রেণিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এখন চীন প্রথম শ্রেণি থেকেই অর্থাৎ সবেমাত্র মাতৃভাষা বলতে ও লিখতে শেখা শিশুদের কণ্ঠেও মান্দারিন ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।

 

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন










© All rights reserved © 2025 pirojpursomoy.com
Design By Rana