শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনার শাখা নদী। নদীর দু’পাশে ২০ থেকে ২৫টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে নিয়মিত নদী পারাপার হন। কিন্তু নদীতে সেতু না থাকায় নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। সেতুর অভাবে এলাকার লোকজন আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত প্রায় ৫০ বছর যাবৎ। একটি মাত্র সেতু বদলে দিতে পারে সরিষাবাড়ী এবং সীমান্তবর্তী কাজিপুর উপজেলার মানুষের জীবন এবং জীবিকা। দীর্ঘদিন স্থানীয়রা সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়সন হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকার শিক্ষার্থী ও সাধারণ লোকজনের।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয়, নদী পার হতে আসা ৭০ বয়সি পরীমন বেওয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, কখন আসবে নৌকা ওপার থেকে সেই আশায় আধা ঘণ্টা ধরে বসে আছি। সেতুটি কবে বানাবে সরকার। আমাদের তো অসুখ হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালেও যাইতে পারি না। শুনছি দেশে কত উন্নতি হচ্ছে। মরার আগে এথানে সেতু দেখে যাইতে পারমুকি। এভাবেই গামারতলার খেয়াঘাটে বসে থাকা কথাগুলো বলেন পরীমন বেওয়াসহ অনেকেই।
যমুনা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুমানা, সোহেল রানা, মেরাজুল ইসলামসহ আরো অনেকেই বলেন, বিদ্যালয়ে যাবার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে পারাপারের জন্য নদীর পাড়ে এসে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পারাপারে দেরি হওয়ায় প্রতিদিনই একটা দুটা ক্লাস বাদ পড়ে যায়। বর্ষার সময় নৌকাতে প্রায় দিনই বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। ভিজে কাপড় নিয়েই করতে হয় ক্লাস। আবার ঝড়ের কবলে পড়ে শিক্ষার্থী ডুবিত হওয়ার ঘটনা ঘটে মাঝে মাঝে।
নদীর খেয়া পার হতে আসা এলাকাবাসী রাজু সরকার, আবু বক্কর, বিউটি বেগম জানান, নির্বাচনের আগে অনেকেই সেতুর তৈরি করে দেওয়ার কথা বলে। বিজয় হওয়ার পর আর কেউ খোঁজ রাখে না। ফসল আবাদ করে পারাপারের অভাবে সঠিক সময় শহরের হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারি না। অসুস্থ হলে দ্রুত সময়ে হাসপাতালেও নেওয়া যায় না। রাতের বেলা পড়তে হয় বড় বিপদে। হয়ে যায় বড় দুর্ঘটনাও। চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের কথা শুনে এই নদীর ওপর একটি সেতু তৈরি করে দেবেন কর্তৃপক্ষ এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।
এ ব্যাপারে পোগলদিঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামস উদ্দিন গ্রামবাসীর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা গ্রাম হবে শহর। নদীর পশ্চিম তীরের ৪০-৫০ হাজার মানুষের বসবাস। চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ও জীবনমানের উন্নতি করতে যমুনা শাখা নদীর ওপর একটি স্থায়ী ব্রিজের দাবি জানান প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
উপজেলা প্রকৌশলী রকিব হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, জায়গাটি এলজিইডি আওতাভুক্ত এবং জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি। সেটি গ্রামবাসীর মাধ্যমে জানতে পারেন তিনি। জেলায় চলমান তিনটি প্রকল্পের মধ্যে ওই ব্রিজের নাম নেই। সামনে প্রকল্প সংশোধনী বা নতুন ব্রিজের অনুমোদন পেলে যমুনা শাখা নদীর ওপর ব্রিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।