শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:২২ পূর্বাহ্ন
জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা
► ১৬ বছর পর নতুন কমিটি করার ঘোষণা
► সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে শত প্রার্থী
“নাসিরনগর ছাত্রলীগ”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ছাত্রলীগ কমিটির পদ পেতে নৌভ্রমণের আযোজন করলেন পদ পেতে আগ্রহী পদপ্রত্যাশীরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয় ২০০৪ সালে। এর আট বছর পর ২০১২ সালে গঠিত হয় আহ্বায়ক কমিটি। তিন মাস মেয়াদের সেই ছয়জনের আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে এখনো চলছে উপজেলা ছাত্রলীগ। তবে করোনা দুর্যোগের মধ্যেই নতুন কমিটি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
নতুন কমিটি করার ঘোষণা দেওয়ার পর পরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে প্রায় ১০০ জন সিভি জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রায় ১০ জন প্রার্থী হতে চাইছেন। এ অবস্থায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ও মন জোগাতে নৌভ্রমণের আয়োজন করেন পদ পেতে আগ্রহীরা। যা এখন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কিছুদিন আগে ছাত্রলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১০০ জন নেতাকর্মী কিশোরগঞ্জের মিঠাবন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম এলাকার হাওরে ঘুরতে যান। তারা একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় (ট্রলার) করে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে দিতে নৌকাতেই উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতে করতে হাওর এলাকায় পৌঁছে । পরে তারা হাওর এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীরা সহ সবাই হাওরের পানিতে নামেন। এরপর তারা খাওয়া দাওয়ার কাজ শেষ করেন। হাওর থেকে নৌকাভ্রমণ শেষে বাড়ি ফিরতে তাঁদের রাত হয়ে যায়।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তত ১৫-২০ জন স্ট্যাটাস দেয়। স্ট্যাটাস দেয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতিতে এ ধরনের আয়োজন নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও কেউ মুখ খুলে কিছু বলতে চাইছে না। মূলতঃ সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের কয়েকজন এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা।
নৌভ্রমণে যোগ দেওয়া ও নাসিরনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আশিকুর রহমান বলেন, ‘একজন আরেকজনকে বলার মধ্য দিয়ে এ আয়োজনটা ঘটা করে হয়ে গেছে। অনেক দিন ধরেই ঘুরতে যাওয়া হয় না বলেই সেখানে যাওয়া। নাসিরনগর থেকে যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ হওয়ায় মূলত সময় কাটানোর জন্য গান ও বাজানো হয়েছে। এখানে ছাত্রলীগের গানের পাশাপাশি অন্যান্য গানও বাজানো হয়েছে।’
নৌভ্রমণের আয়োজকদের অন্যতম জি এম সোহেল আহমেদ বলেন, ‘আসলে আমরা ১০-১৫ জন বন্ধু মিলে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নৌকায় গিয়ে ছোট ছোট অনেক ভাইয়েরা উঠে যায়। তাদের ফেলে যাওয়ার পরিস্থিতি ছিল না। এতে আমাদের খাবারের সংকটও হয়েছে। এত লোকজন হবে—সেটা আমরা ভাবতেও পারিনি। তবে ছাত্রলীগের সম্মেলনের সঙ্গে এর কোনো যোগসাজেশ নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘আমাদের এখানে চেইন অব কমান্ড নেই বললেই চলে। এখন সবাই ছাত্রলীগ করে। আমরা একটি মাধ্যমে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি করার ঘোষণা দেওয়ার পর শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রায় ১০০ জন সিভি জমা দিয়েছেন। মূলতঃ সম্মেলনকে কেন্দ্র করেই এ ধরনের আয়োজন করা হয়েছে, যা করোনা পরিস্থিতিতে মোটেও ঠিক হয়নি।’
উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন রানা বলেন, ‘এ আয়োজনের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি আমার জানা ও নেই। ফেসবুকে এ নিয়ে স্ট্যাটাস দেখার পর বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি করার উদ্যোগ নেওয়া কিংবা নৌভ্রমণের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এমন সময়ে কমিটি করার উদ্যোগ কিংবা এভাবে নৌভ্রমণে যাওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। মূলতঃ জেলা কমিটি অথবা কেন্দ্রীয় কমিটি উপজেলা কমিটি গঠনের এখতিয়ার রাখে। কিন্তু নাসিরনগরের একজন জনপ্রতিনিধি এ বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন নিজের মতো করে কিছু একটা করার জন্য, যেটা তিনি পারেন না।’