শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন
জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতাঃ
শত বছরের বৃদ্ধ চাঁন মিয়া বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছে গত দুই বছর ধরে । এর ফলে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোস্কা পড়ে পচঁন ধরেছে। এই বৃদ্ব অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেনা সে। চিকিৎসা করা তো দূরের কথা, রয়েছে তার প্রচুর খাবারের অভাব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃদ্ব চাঁন মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাঁটিহাতার কোনাহাটি গ্রামের।
চাঁন মিয়া তার বাসস্থানেট বিছানায় শুয়ে শুয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এই প্রচন্ড শীতের মাঝে শরীরে জড়ানো রয়েছে একটি ছেড়া লুঙ্গি। পাশে বসে থাকেন তার স্ত্রী ৮০ বছরের বৃদ্ধা পেঁয়ারা বেগম।
চাঁন মিয়ার স্ত্রী পেঁয়ারা বেগম ও ছোট মেয়ে হোসনা আরা বেগম জানান, চাঁন মিয়ার নিজের বাড়ি ও প্রায় ২৪০ শতাংশ কৃষি জমি ছিল। সেই জমিতে চাষাবাদ করে চলতেন। এক সময় তার আর্থিক অবস্থা ও সচ্ছল ছিল। ২ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক তিনি। এরমধ্যে বড় মেয়ে জন্ম থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী। দু ছেলেই থাকে বাড়ির বাইরে। ছোট মেয়ে হোসনাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়ির কাছেই। চাঁন মিয়ার জমি ও নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে তার দুই ছেলে। বর্তমানে যে বাড়িতে শতবর্ষী চাঁন মিয়া বসবাস করছেন, এই বাড়িটি তারই ছিল। কিন্তু ছোট ছেলে তা বিক্রয় করে দিয়েছে। বাড়ির মালিক একটি ঘরে চাঁন মিয়া, তার স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী মেয়েকে থাকার জায়গা দিয়েছেন।
তারা আরও জানান, চাঁন মিয়া অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে যান প্রায় দুই বছর আগে। এরপর থেকে সংসারের অভাব অনটন ও বাড়তে থাকে। অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে তার শরীরে বিভিন্ন অংশে ফোসকা পড়ে গেছে। এই ফোসকায় ইতিমধ্যেই পচঁন ও ধরেছে। কিন্তু চিকিৎসা করার মতো সামর্থ এখন তার নেই। অর্থের অভাবে এমন সময় ও অতিবাহিত হয়, যে সে ও তার পরিবারের লোকজন এক বেলা খেলে আরএকবেলা না খেয়ে থাকতে হয়।
চাঁন মিয়ার অসুস্থতার খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সোহরাব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সোহাগ নামের দুই যুবক এসে কিছু খাদ্য সহায়তা করেছেন। ছাড়াও তারা চাঁন মিয়ার পরিবারের জন্য অন্যান্যদের কাছ থেকে সহায়তা পাইয়ে দেওয়ারমচেষ্টা করছেন।
তার ছোট মেয়ে হোসনা আরও জানান, আমার শ্বশুর বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় মাঝে মধ্যে আমি খাবার দিয়ে যায় । কিন্তু সব সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। পাশাপাশি বাইরের লোকজনও খাবার দিয়ে যায়। যেখানে আমার বাবা খাবারই খেতে পারেন না, সেখানে তার চিকিৎসা কিভাবে করবে? তিনি বলেন, আমার দুই ভাই সম্পদ বিক্রি করার পর বাবার আর কোন খোঁজ রাখেন না। যে বাড়িতে আছেন, তার মালিকও বাড়ি ছাড়তে চাপ দিচ্ছেন। আমি ভাবনায় আছি, এই অবস্থায় আমার বৃদ্ধ বাবা, বৃদ্ধা মা ও প্রতিবন্ধী বোনের কি অবস্থা হবে? আমার বাবার চিকিৎসা করাব কি ভাবে? তাই আমার বাবাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজের দয়াবান,বিত্তশালী ও সচেতন নাগরিকদের নিকট সাহায্যে হাত বাড়িয়ে আমার বাবাকে চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার জন্য অনুরুধ করছি। এমনকি মমতাময়ী মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ও আকুল প্রার্থনা করছি।
আমার বাবার এই সংকটময় মুহূর্তে কেউ যদি এগিয়ে আসে, তাহলে আমি ও আমাদের পরিবারের লোকজন তাদের নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকিব।